তমালিকা কর্মকার একজন বাংলাদেশী মডেল এবং নাট্য অভিনেত্রী।[১][২] রাঢ়াঙ নাটকের শ্যামলী, ময়ূর সিংহাসন-এর কৃষ্ণা এবং বিদ্যাসাগর-এর রাধা চরিত্রগুলোর জন্য তিনি বিশেষ ভাবে পরিচিত। তিনি একই সাথে কোরিওগ্রাফার এবং প্রশিক্ষক। তিনি রাঢ়াঙ এর ১৭৫ টি মঞ্চাভিনয় করেছেন। মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রে সমানভাবে পদচারণা রয়েছে তার।[৩] তার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয় অন্য জীবন এর মাধ্যমে। তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রসমূহ হল এই ঘর এই সংসার (১৯৯৬), কিত্তনখোলা (২০০০), ও ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২)। কিত্তনখোলা ছবিতে অভিনয়ের জন্য তমালিকা ২০০২ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
তমালিকা কর্মকারের জন্ম ২ জুলাই ১৯৭০ সালে খুলনায়। জন্মের ৮ মাস পরে তিনি তার পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ১৯৭৮ - ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিটিভি তে প্রচারিত ফুলকুঁড়ি তে গল্প বলা এবং ছবি আঁকায় অংশ নিয়েছেন। তমালিকা কর্মকারের মাত্র ৩ বছর বয়সে তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়।[৪] নাট্যকার গোলাম মোস্তফার কাছে তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়। সাধারন নৃত্যে গহর জামিল, কথ্যকে নিকুঞ্জ বিহারি পাল এবং ছায়ানটে প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত এর চর্চা শুরু করেন।
তমালিকার অভিনয় শুরুটা মঞ্চ থেকেই, যখন তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর।[৪] ১৯৯২ সালে আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত মামুনুর রশীদের লেখা ও আজিজুল হাকিম নির্দেশিত নাটক পাথর এর মাধ্যমে তার মঞ্চাভিনয় শুরু।[৪][৫] এরপর আরণ্যক দলের অন্যতম নাটক ইবলিস, জয়জয়ন্তী, খেলা খেলা, ওরা কদম আলী, প্রাকৃতজন কথা, রাঢ়াঙ,[৬]বিদ্যাসাগর এবং ময়ূর সিংহাসনে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে থিয়েটার অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়তা পান।[৫]
তমালিকার প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় অন্য জীবন এর মাধ্যমে। তবে সফলভাবে চলচ্চিত্রাঙ্গনে যাত্রা করে ১৯৯৬ সালে এই ঘর এই সংসার ছবিতে চিত্রনায়ক আলী রাজের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে। তার বিশেষ কিছু কাজের মধ্যে ২০০০ সালে কিত্তনখোলা চলচ্চিত্রে বেদের মেয়ে ডালিমন চরিত্র এবং ২০১২ সালের ঘেটুপুত্র কমলায় কমলার মা চরিত্র অন্যতম।[৭] ১৯৯৬ সালে তিনি লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক কোথাও কেউ নেই তে অভিনয় করেছেন এবং এর মাধ্যমেই তিনি সবচেয়ে আলচিত হোন। এছাড়াও 'নাট্যযুদ্ধ' নামের একটি রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তিনি সিওল, দক্ষিণ কোরিয়াতে আন্তর্জাতিক "থিয়েটার ফেস্টিভাল" অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকারের "শিল্পকলা একাডেমী" এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যান। ২০১৩ সালে, তিনি "এনওয়াইএস এসেম্বলি" স্বীকৃতি লাভ করেন।
পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী তমালিকা কর্মকারের বোন এবং অরুণ চৌধুরী তার দুলাভাই। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় বসবাস করা শুরু করেছেন। দেশে খুব নাটকেই অভিনয় করেন। শেষ কয়েক বছরে তিনি নিজেকে অভিনয় থেকে কিছুটা আড়ালেই রেখেছেন।[৮]
সাল | নাটকের নাম | টীকা |
---|---|---|
১৯৯২ | পাথর | ৫৫ টি মঞ্চ, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, পরিচালক আজিজুল হাকিম |
১৯৯৭ | জয় জয়ন্তী | ১০৩ টি মঞ্চ |
ময়ূর সিংহাসন | ১১৫ টি মঞ্চ | |
১৯৯৮ | প্রাকৃতজন কথা | ২০ টি মঞ্চ |
২০০৪ | রাঢ়াঙ [৯] | ১৭৪ টি মঞ্চ |
২০১০ | শত্রুগণ | ১২ টি মঞ্চ |
২০১০ | উপরওয়ালা | ১ টি মঞ্চ |
২০১০ | স্বপ্নযাত্রিক | ১ টি মঞ্চ, রানা প্লাজা ধ্বস অবলম্বনে |
২০১০ | খেলা খেলা | ২ টি মঞ্চ |
২০১৬ | ভংগবঙগ | ২৪ টি মঞ্চ |
২০১৭ | জুবলি হোটেলে | ১৮ টি মঞ্চ |
২০১৭ | আদম | পরিচালনায় মামুনুর রশীদ |
২০১৭ | মানুষ | অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন/সিডনীতে প্রদর্শিত, পরিচালনায় মামুনুর রশীদ |
২০১৭ | ইবলিশ | লন্ডনে প্রদর্শিত, পরিচালনায় মামুনুর রশীদ |
মায়ের মুখ | ১০ টি মঞ্চ, প্রাচ্য নাট্যদল | |
সায়লক | ২ টি মঞ্চ, প্রাচ্য নাট্যদল |
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রীদের জন্য সর্বাপেক্ষা সম্মানীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার; যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের অংশ হিসাবে ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতি বছর দেওয়া হয়। তমালিকা কর্মকার কিত্তনখোলা (২০০০) ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০০২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার[১০]
মঞ্চ, টিভি এবং চলচ্চিত্রাঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ২০১৩ সালের ২১ জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা সম্মাননা[১১]
২ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে তামালিকা কর্মকারকে মেগা স্টার্ট ম্যাগাজিন অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের মেগা স্টার্ট মিউজিক অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট অভিনয় এবং থিয়েটারের পারফরমেন্সে অসাধারণ কৃতিত্ব এর জন্য মেগা স্টার্ট মিউজিক অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।[১২]
"কেরালা আন্তর্জাতিক থিয়েটার ফেস্টিভাল" (ITFOK) "ভারতবর্ষের কেরালা রাজ্যের ত্রিসূর শহরে প্রতিবছর প্রতি বছর অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসব। এই উৎসব "কেরালা সংগীত নাটক একাডেমী" এবং কেরালার সরকার সংস্কৃতি বিভাগ দ্বারা পরিচালিত বা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে প্রথম এই উৎসব শুরু হয়। এটি তামিলকা কর্মকারকে কেরালা ২০০৮ এর আন্তর্জাতিক থিয়েটার ফেস্টিভাল নামে একটি স্মারক হিসেবে প্রদান করে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন দর্শক ফোরাম (টিডিএফবিডি) বাংলাদেশের দর্শকদের ভোটিং দ্বারা বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য কমিউনিটি। এটি বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের তাদের কর্মের উপর পুরস্কার প্রদান করে। তমালিকা কর্মকার ২০০৫ সালে সেরা অভিনেত্রীকে ক্যাটাগরিতে তাকে এই পুরুস্কারে ভূষিত করে।
একতা পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড "একতা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন" দ্বারা প্রতি বছর প্রদান করা হয়। প্রতিবছর তারা সমগ্র দেশে সেরা শিল্পীদের সম্মানিত করার জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ২০০৪ সালে তমালিকা কর্মকারকে নাটকে সেরা অভিনেত্রী হিসাবে এই পুরস্কার প্রদান করেন।
তমালিকা ২০১০ সালে ডিপিএল মিডিয়া সিটি শোবিজ সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার পুরস্কার অর্জন করেন। এই পুরস্কারটি ঢাকা সাংস্কৃতিক রিপোটার ইউনিটি দ্বারা প্রদান করা হয়।
২০০২ সালে, তমালিকা কর্মকার বাংলা টেলিফিল্ম কুরুক্ষেত্রে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য "একতা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা" সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৮২ সালে তমালিকা কর্মকার বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি তে গল্প বলা ক্যাটাগরিতে সেরা শিশু শিল্পী পুরস্কার অর্জন করেন। এই পুরস্কারের মাধ্যমেই তার শিল্পিক জীবনের আরম্ভ হয়।[৪]
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের অভিনয়ের জন্য ১৯৮৯ সালে তামলিকা কর্মকার রেসিয়েড আন্তর্জাতিক পেন-পল ক্লাব পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি আরণ্যক নাট্যদল এর ৫০তম স্টেজ শোতে আরণ্যক নাট্যদল অ্যাওয়ার্ড নামক সম্মানজনক পদক জিতেছেন। আরণ্যক নাট্যদল বাংলাদেশের একটি বিশিষ্ট থিয়েটার গ্রুপ।
তমালিকা কর্মকার তাদের ৩২ বছর পূর্তিতে বর্ণচোরা নাট্য গোষ্ঠি পুরস্কার পেয়েছেন। বর্ণচোরা নাট্য গোষ্ঠি বাংলাদেশে একটি পুরানো থিয়েটার এবং পারফরম্যান্স গ্রুপ।
২০০৪ সালে ঢাকা থিয়েটারে তমালিকা কর্মকার ফাওজিয়া ইয়াসমিন শিবলি পদক পান, যা শিমিল আল দিনা জন্ম উৎসবে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং থিয়েটারে অভিনয়ের জন্য প্রদান করা হয়।[৫]
উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমিতি থেকে প্রাপ্ত সম্মানসূচক পুরস্কার।[৯]
Copyright ©browrust.amasadoradepan.com.es 2025